কম্পিউটার কি?
কনটেন্ট টেবিল
কম্পিউটার আধুনিক মানব সভ্যতার একটি দরকারী আবিষ্কার। কম্পিউটার সবকিছুকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে কম্পিউটারের প্রয়োজন নেই। কম্পিউটার মানব জীবনের সকল কাজের নির্দেশনা দিয়েছে যা গতিশীল ও সময়োপযোগী। কম্পিউটার আবিস্কারের পর থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা সবকিছুতেই সৃজনশীলতা ও সহজলভ্যতা পাওয়া গেছে, যা এই শতাব্দীতে জীবনকে অনেক বেশি সৃজনশীল ও সহজ করে তুলেছে। আজ আমরা মূলত কম্পিউটার নিয়ে কথা বলব। তো, দেরি না করে শুরু করা যাক!
কম্পিউটারের ইতিহাস
কম্পিউটার সৃষ্টির ইতিহাস আমাদের অনেকেরই অজানা। কম্পিউটারের জন্ম কয়েক হাজার বছর আগে, কিন্তু কয়েক বছর আগে নয়। প্রায় তিন হাজার বছর আগে চীন গণনা করতে অ্যাবাকাস ব্যবহার করা হয়েছিল। এই অ্যাবাকাস থেকেই আধুনিক ক্যালকুলেটর তৈরির ধারণা এসেছে বলে ধারণা করা হয়। কয়েকটা দর ঘুরিয়ে হিসাবটা করা হয়েছিল। প্রথম কম্পিউটার চিন্তার উৎপত্তি প্রাচীন অ্যাবাকাস থেকে।
1821 সালে, চার্লস ব্যাবেজ একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেন যা সংখ্যার পাশাপাশি তথ্যের সাথে কাজ করে, যার নাম ডিফারেন্স ইঞ্জিন। এই ডিভাইসের একটি উন্নত সংস্করণ, বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিন, কয়েকদিন পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল, কিন্তু ছিদ্রযুক্ত পাঞ্চ-কার্ডটি শুধুমাত্র একবার ডিভাইসটি চালানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ডিভাইসটির তিনটি অংশ ছিল, একটি ছিল তথ্য প্রদানের অংশ, একটি ছিল ফলাফল প্রদানের অংশ এবং একটি অংশ ছিল তথ্য সংরক্ষণের অংশ। আধুনিক কম্পিউটারের অংশগুলি চার্লস ব্যাবেজের বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিনের অনুরূপ। তাই চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
1890 সালে, ডঃ হারম্যান হলোরিথ ইউ.এস. সেন্সাস ব্যুরোর চার্লস ব্যাবেজের যন্ত্রে ট্যাবুলেটর নামক একটি যন্ত্র যোগ করেন যা গণনার সুবিধার্থে কাগজের তৈরি একটি পাঞ্চ-কার্ড ব্যবহার করে যা একটি ট্যাবিলেটর দিয়ে ড্রিল করা যায়। আর এই যন্ত্রের সাহায্যে তিনি জনগণনার যে কাজটি করতে দশ বছর লেগেছিল তা মাত্র তিন বছরেই করে ফেললেন। ডঃ হারম্যানের প্রচেষ্টা এতটাই সফল হয়েছিল যে তিনি ট্যাবুলেটিং মেশিন কোম্পানি তৈরি করেছিলেন যা পরবর্তীতে আইবিএম নামে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। তারপরে ধীরে ধীরে কম্পিউটার বিজ্ঞানের বিকাশ হতে শুরু করে এবং আমরা এমন সমস্ত অত্যাধুনিক কম্পিউটার জুড়ে এসেছি যা সভ্যতাকে বদলে দিয়েছে।
প্রথম কম্পিউটার কি?
বিশ্বের প্রথম কম্পিউটারের নাম ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer)। এটি প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার যা প্রোগ্রামগুলির সাথে কাজ করে। তখন থেকেই কম্পিউটার প্রজন্ম শুরু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, যখন মার্কিন সামরিক বাহিনী একটি সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক কম্পিউটার তৈরির পরিকল্পনা করেছিল, তখন আধুনিক কম্পিউটারের জনক ভন নিউম্যান, প্রেসার একার্টি এবং হারম্যান গোল্ডস্টেইনের মতো কম্পিউটার জায়ান্টরা মুর স্কুল অফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। চল্লিশজন বিজ্ঞানী পঞ্চাশ ফুট বাই ত্রিশ ফুটের একটি ভূগর্ভস্থ ঘরে তিন দেয়ালের এই কম্পিউটারটি পরিচালনা করেছিলেন।
কিভাবে একটি কম্পিউটার কাজ করে?
কম্পিউটার সাধারণত দুটি মাধ্যমের সমন্বয়ে কাজ করে। নীচে উদাহরণ সহ এটি আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথমত, হার্ডওয়্যারঃ কম্পিউটারের বাহ্যিক আকৃতি বিশিষ্ট সকল যন্ত্র, যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রকে হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- ক) ইনপুট সরঞ্জাম: কীবোর্ড, মাউস, ডিস্ক, স্ক্যানার, কার্ড রিডার, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি।
খ) সিস্টেম ইউনিট: হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, এজিপি কার্ড, র্যাম ইত্যাদি।
ঘ) আউটপুট সরঞ্জাম: মনিটর, প্রিন্টার, ডিস্ক, স্পিকার, প্রজেক্টর, হেডফোন ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত, সফ্টওয়্যার: একটি প্রোগ্রাম হল সমস্যা সমাধান বা কার্য সম্পাদনের জন্য কম্পিউটারের ভাষায় সাজানো নির্দেশাবলীর একটি সিরিজ। সফ্টওয়্যার হল সেই প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের সেট যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে হার্ডওয়্যারকে কাজ করে। কম্পিউটার সফটওয়্যারকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- ক) সিস্টেম সফ্টওয়্যার: সিস্টেম সফ্টওয়্যার সফলভাবে কম্পিউটারের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে কাজের সমন্বয় বজায় রাখে এবং ব্যবহারিক প্রোগ্রামগুলি চালানোর জন্য কম্পিউটারের দক্ষতা সফলভাবে নিয়োগ করে।
খ) অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার: ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান বা ডেটা প্রক্রিয়া করার জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রামকে অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার বলে। ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য ডিজাইন করা বিভিন্ন প্রোগ্রাম বাণিজ্যিক পণ্য হিসাবে উপলব্ধ, সাধারণভাবে প্যাকেজ প্রোগ্রাম হিসাবেও উল্লেখ করা হয়।
তাই কম্পিউটার হল হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বয়।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ
কম্পিউটার গঠন এবং প্রচলন নীতির ভিত্তিতে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়
- এনালগ কম্পিউটার
- ডিজিটাল কম্পিউটার
- হাইব্রিড কম্পিউটার
আকার, ক্ষমতা, মূল্য এবং ব্যবহারের গুরুত্বের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটারকে আরও চারটি ভাগে ভাগ করা যায়
- মাইক্রোকম্পিউটার
- মিনিকম্পিউটার
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার
- সুপার কম্পিউটার
মাইক্রোকম্পিউটার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- ডেস্কটপ
- ল্যাপটপ
উপসংহার
এক কথায় কম্পিউটারের অনেক ব্যবহার রয়েছে। বাড়ির কাজ থেকে শুরু করে ব্যবসা, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর অপরিসীম ব্যবহার রয়েছে। সর্বোপরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি এক অনন্য বিপ্লব এনেছে। এটি চিকিৎসা ও মানব কল্যাণেও অনন্য অংশীদার। এক কথায় কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা প্রায় সবকিছুই করতে সক্ষম। আশা করি, উপরের তথ্য থেকে আপনি কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। আপনার যদি এইগুলি সম্পর্কে আরও কোনও প্রশ্ন থাকে তবে আপনি আমাদের মন্তব্যে জানাতে পারেন। সুতরাং, এই নিবন্ধটি পড়ার পরে, আপনি যদি নিবন্ধটি থেকে কোনও নতুন বিষয় শিখে থাকেন তবে তা আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন এবং আপনিও যদি এমন কোনও বিষয় জানেন তবে মন্তব্য করতে ভুলবেন না।